Awareness meeting on cyclone and disaster preparedness held in Barguna
দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশে প্রথমবারের মত ব্যতিক্রমী কর্মমূখী স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়
দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশে প্রথমবারের মত ব্যতিক্রমী কর্মমূখী স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়
২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বরগুনার শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে ১০০ স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে
‘আঁধার, দুর্যোগ, শান্তিতে, স্বেচ্ছাসেবক সবার আগে’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বরগুনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিনদিনব্যাপী। দেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এ ধরণের প্রশিক্ষণ এটাই প্রথম। প্রশিক্ষণ থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগকালের কঠিন সময়ের জন্য শক্তিশালী হওয়ার কলাকৌশল শিখবে।
প্রশিক্ষণটি ভাবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে; যাতে তারা দুর্যোগাক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে এবং দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারী।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের গুরুত্বও বেড়েছে অপরিসীম। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী সাইক্লোনের পর থেকে বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের প্রসার ঘটে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে। বরগুনার তালতলীতে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবকদের এই অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে উদ্যোক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বরগুনা জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে তালিকাভূক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধাপে বাছাইয়ের মধ্যদিয়ে এই প্রশিক্ষণের জন্য ১০০ অংশগ্রহনকারী নির্বাচন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০জন নারী এবং ৫০জন পুরুষ। করোনা মহামারীর জরুরি সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে জাগোনারী। প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০০’র বেশি স্বেচ্ছাসেবক বেসিক দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক অ্যাডভান্স সার্ভাইভাল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে।
প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দক্ষ প্রশিক্ষকগণের সরাসরি তত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবিলার বাস্তবভিত্তিক কলাকৌশলগুলো শিখতে পারবেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডো, স্কাউট ও বিএনসিসির অভিজ্ঞ ট্রেনার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও মানবিক কার্যক্রম বিশেষজ্ঞগণ প্রশিক্ষণের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করবেন।
তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সেশনগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অংশগ্রহনকারী স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনটি পর্যায়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহন করার সুযোগ পাবেন। এরমধ্যে রয়েছে উদ্ধার (Rescue), বেঁচে থাকা (Survival) এবং প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid)। উদ্ধার (Rescue) পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের সাথে উদ্ধারের দক্ষতা অর্জন করবেন অংশগ্রহনকারীরা। তারা অপারেশন উদ্ধার বিষয়ে হাতেকলমে শিখতে পারবেন। দুর্যোগকালে নিজেদের বাঁচাতে ভেলা প্রস্তুত করার কৌশল শিখবে স্বেচ্ছাসেবকেরা। যা উদ্ধার এবং পানিতে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। একই সাথে তারা শিখবে দড়ির দক্ষতা; যা উদ্ধার ও জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
প্রশিক্ষণে বেঁচে থাকা (Survival) বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করবেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই পর্যায়ে থাকবে একটি পরিষ্কার তীরের জন্য বালুকাময় ধাপ। তারার নীচে রাতারাতি তাঁবু ক্যাম্পিং এবং বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন অংশগ্রহনকারীরা। উন্নত নিরাপত্তার জন্য অংশগ্রহনকারীরা গাছের প্ল্যাটফর্ম এবং অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করার কৌশল শিখবেন। তারা শিখবে জরুরি অবস্থার জন্য কীভাবে নিজেদের ক্ষমতায়িত করতে হয়। এখান থেকে তারা বুঝতে পারবেন স্থিতিস্থাপকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য জীবন দক্ষতা কীভাবে বাড়াতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহনকারীদের একটি অগ্রণী প্রকল্প, সেবা করার জন্য প্রস্তুত, স্বেচ্ছাসেবকদের নিজেদের ঝুঁকি হ্রাস করা এবং বেঁচে থাকার দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
প্রশিক্ষণে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid) বিষয়ে হাতেকলমে জ্ঞান অর্জন করবে। তারা কোয়ান্টাম পদ্ধতি শিথিলকরণ এবং ধ্যানে মগ্ন হবে। এর মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ বিষয়ে ধারণা পাবে। জরুরি পরিস্থিতে সময়কে কাজে লাগানোর চর্চা করার সুযোগ পাবে। চিকিৎসা সহায়তা আসার আগে যাতে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা যায়; সে কৌশল শিখবে তারা।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রনকারীরা বরগুনার তালতলী উপজেলার সমুদ্র এবং পায়রা ও বিশখালী নদীর মোহনায় শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া বনে তাঁবুতে অবস্থান করবেন। তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্যদিয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন।
27th anniversary of JAGO NARI
Journey to Achieve Greater Prosperity